শনিবার, ৩০ এপ্রিল, ২০১৬

ফ্রান্সে কি কি ভিসায় যাওয়া যায়? কোথায় গিয়ে আবেদন করতে হয়? এবং কোন ভিসার জন্য কিভাবে অ্যাপ্লাই করতে হয় ইত্যাদি তথ্য জেনে নিন।


 প্রিয় প্রবাসী বাংলাদেশী ওয়েব সাইটের সম্মানিত পাঠক বৃন্দ আশা করি আপনারা মহান সৃষ্টি কর্তার অশেষ রহমতে সবাই ভালোই আছেন। বন্ধুরা আজকে আমরা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আপনাদের সাথে আলোচনা করবো। ফ্রান্সে কি কি ভিসায় যাওয়া যায়? কোথায় গিয়ে আবেদন করতে হয়? এবং কোন ভিসার জন্য কিভাবে অ্যাপ্লাই করতে হয় ইত্যাদি।

ফ্রান্স দূতাবাসঃপশ্চিম ইউরোপের সমৃদ্ধ দেশ ফ্রান্স। আইফেল টাওয়ার আর মোনালিসার দেশে কেবল বেড়ানো নয় পড়াশোনা এবং চাকরির জন্যও যাচ্ছেন অনেকে। তবে ফ্রান্সের প্রধান ভাষা ইংরেজী না হওয়ার কারণে পড়াশোনা বা চাকরির জন্য যেতে চাইলে ফ্রান্স ভাষাটা শিখে নেয়া ভাল। স্বল্প মেয়াদী হোক আর দীর্ঘ মেয়াদী হোক ভিসার জন্য যোগাযোগ করতে হবে গুলশানের ফ্রান্স দূতাবাসে যেতে হবে।
  • ঠিকানা : বাড়ি নং- ১৮, রোড নং-১০৮, গুলশান-২, ঢাকা
  • ফোন: ০২-৮৮১৩৮১১-৪
  • ফ্যাক্স- +৮৮-০২-৮৮২৩৬১২
  • ওয়েবসাইট: www.ambafrance-bd.org
  • ই-মেইল: ambafr@ambafrance-bd.org
  • লোকেশন: গুলশান-২ চৌরাস্তা থেকে দক্ষিণ দিকে ২০০ গজ এগিয়ে পূর্ব পাশে ওয়ান্ডারল্যান্ডের পিছনে অবস্থিত।
খোলা-বন্ধের সময়সূচী:দূতাবাসটি শুক্রবার ও শনিবার ছাড়া প্রতিদিন সকাল ৯.০০-বিকাল-৫.০০ টা পর্যন্ত খোলা থাকে।আর ভিসা বিভাগ রবিবার থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৮:৩০ থেকে ১০:৩০ পর্যন্ত খোলা থাকে।
ভিসা বিভাগে যোগাযোগঃ
  • ফোন:(০০৮৮০২) ৮৮২৩৩২০/৮৮২৩৪৪৩
  • ফ্যাক্স: (০০৮৮০২) ৯৮৮৩৮৫১
  • ই-মেইল: webmestre.dacca-amba@diplomatie.gouv.fr
  • উল্লেখ্য ফ্রান্সসহ কেবল ২৬টি ইউরোপীয় দেশে ভ্রমণের জন্য স্বল্পমেয়াদী ভিসার আবেদনকারীদের জন্য আগে থেকে এ্যাপয়েন্টমেন্টের প্রয়োজন হয় না।
ফ্রান্সে আসার জন্য যে যে ভিসা গুলো রয়েছে?
শ্যানগেন (Schengen) ভিসাঃ অস্ট্রিয়া, বেলজিয়াম, চেক রিপাবলিক, ডেনমার্ক, এস্তোনিয়া, ফিনল্যান্ড, ফ্রান্স, জার্মানী, গ্রিস, হাঙ্গেরী, আইসল্যান্ড, ইতালী, লাতভিয়া, লিথুয়ানিয়া, লুক্সেমবার্গ, মাল্টা, নেদারল্যান্ড, নরওয়ে, পোল্যান্ড, পর্তুগাল, স্লোভাকিয়া, স্লোভেনিয়া, স্পেন, সুইডেন, এবং সুইজারল্যান্ডে একক ভিসায় ভ্রমণ ব্যবস্থা হল সেনজেন ভিসা। এ ভিসা নিয়ে ইউরোপের এই ২৬টি দেশে স্বাধীনভাবে ভ্রমণ করা যায় এবং সর্বোচ্চ ৯০ দিন থাকা যায়। এ ভিসার মেয়াদ ৬ মাস, অর্থাৎ ৬ মাসের মধ্যে যেকোন ৯০ দিন ইউরোপের দেশগুলোতে কাটানো যায়। ইউরোপে প্রবেশের প্রথম দিন থেকে দিন গণনা শুরু হয়। তবে শ্যানগেন ভিসার আওতায় স্থায়ীভাবে বসবাস বা কাজের অনুমতি দেয়া হয় না।ঢাকাস্থ ফ্রান্স দূতাবাস থেকে বিজনেস ভিসা এবং ভ্রমণ ভিসা দু’ধরনের শ্যানগেন ভিসাই দেয়া হয়। তবে ব্যবসা ভিসা কাজের অনুমতি দেয় না, কেবল বাণিজ্য সংক্রান্ত যোগাযোগের জন্য এ ভিসা।ঢাকাস্থ ফ্রান্স দূতাবাস থেকে অস্ট্রিয়া এবং পর্তুগালের জন্যও শ্যানগেন ভিসা ইস্যু করা হয়।
শ্যানগেন (Schengen) ভিসা আবেদনের নিয়মঃযিনি ফ্রান্স যেতে ইচ্ছুক তাকেই ব্যক্তিগতভাবে আবেদন করতে হবে। কোন ট্রাভেল এজেন্ট বা অন্য কেউ আবেদন করতে পারেন না।মূল গন্তব্য দেশের দূতাবাসে আবেদন করতে হবে। আর গন্তব্য স্থির না থাকলে প্রথম গন্তব্য যে দেশ সে দেশের দূতাবাসে আবেদন করতে হবে। কাজেই মূল গন্তব্য বা প্রথম গন্তব্য ফ্রান্স হলেই কেবল এ ধরনের ভিসার জন্য ফ্রান্স দূতাবাসে আবেদন করা যাবে।
  • তিন সপ্তাহ থেকে তিন মাস সময় নিয়ে ভিসার আবেদন করার পরামর্শ দেয়া হয়।
  • ভিসা পাওয়ার জন্য অন্তত ১০ কর্মদিবস অপেক্ষা করতে হবে। এ সময়ে অন্যান্য ইউরোপীয় দেশগুলোর সাথে যোগাযোগ করা হয়।
  • ভিসা আবেদন এবং ভিসা ফি জমা দেয়া ভিসা প্রাপ্তির নিশ্চয়তা দেয় না।
  • ভিসা ইস্যু হওয়ার পর ভ্রমণের উদ্দেশ্য বা পরিকল্পনায়া পরিবর্তন আনা যায় না।
  • সকল কাগজপত্রের ফটোকপি এবং মূলকপি প্রদর্শন করতে হবে।
  • কাগজপত্রগুলো ইংরেজী বা ফরাসী ভাষায় অনুদিত হতে হবে।
সব ধরনের আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও ফিঃ
  • ফ্রান্স দূতাবাসের ওয়েবসাইট থেকে ভিসা আবেদন ফরম ডাউনলোড করে বড় হাতের অক্ষরে পূরণ করে তারিখসহ সাক্ষর করতে হবে।
  • পরিকল্পিত সফর শেষেও পাসপোর্টের মেয়াদ অন্তত তিন মাস থাকতে হবে।
  • সাদা পটভূমিতে তোলা ৩৫×৪৫ মিমি সাইজের দুই কপি রঙিন ছবি দিতে হবে, রঙিন চশমা বা মাথায় টুপি পরে ছবি তোলা যাবে না।
  • পাসপোর্টের যে পৃষ্ঠাগুলোয় তথ্য দেয়া হয় সেগুলোর স্পষ্ট ফটোকপি।
  • আবেদন প্রক্রিয়াকরণ মাশুল হিসেবে ৬০ ইউরো সমপরিমাণ অর্থ, যেটি অফেরতযোগ্য।
তবে বিজনেস ভিসার জন্য আরও কিছু কাগজপত্র প্রয়োজন হয়:
  • ভ্রমণের উদ্দেশ্যে প্রমাণের জন্য শ্যানগেন দেশগুলোর কোথায় যাওয়া হচ্ছে তা উল্লেখ করে সেমিনার বা ওয়ার্কশপের অমন্ত্রণপত্র দেখাতে হয়,
  • আমন্ত্রণকারী ভ্রমণ ব্যয় বহন করলে তার প্রমাণপত্রও দিতে হয়,
  • ব্যবসার বেজিষ্ট্রেশন এবং ট্রেড লাইসেন্সের কপি,
  • হোটেল বুকিং এর কাগজ পত্রের কপি।
ভ্রমণ ভিসার জন্য যেসব কাগজপত্র দিতে হয়:
স্পন্সর থাকলে-
  • স্পন্সরের পাসপোর্ট বা আইডি কার্ডের মূলকপি এবং ফটোকপি,
  • বেকার নয় এটা প্রমাণের জন্য বিগত তিন মাসের বেতনের প্রমাণপত্র
স্পন্সর না থাকলে-
  • হোটেল বুকিং এর প্রমাণপত্র,
  • ছুটির মেয়াদ উল্লেখ করে চাকুরিদাতা প্রতিষ্ঠানের দেয়া সনদ,
  • বিগত ছয় মাসে ব্যাংক একাউন্টের বিবরণী,
  • অনেক ক্ষেত্রে পারিবারিক সম্পর্কের প্রমাণপত্রও চাওয়া হয়।
 এয়ারপোর্ট ট্রানজিট ভিসাঃ 
বিমান ভ্রমণের সময় শ্যানগেন দেশগুলোয় যাত্রাবিরতি করলে এ ধরনের ভিসা নিতে হয়। তবে এ ভিসার আওতায় বিমানবন্দরের ট্রানজিট এলাকার বাইরে যাওয়া যায় না। ট্রানজিট এলাকার বাইরে গিয়ে হোটেলে থাকতে চাইলে ট্যুরিস্ট ভিসা নিতে হবে।
  • প্রয়োজনীয় কাগজপত্র,
  • গন্তব্য দেশের ভিসা,
  • বিমান টিকেট,
  • এক্ষেত্রে ভ্রমণ স্বাস্থ্যবীমা প্রয়োজন হয় না।
 বিশেষ খেত্রেঃ
চিকিৎসা: চিকিৎসার জন্য ফ্রান্সে যেতে চাইলে প্রথম একজন বাংলাদেশী চিকিৎসকের দেয়া সনদ নিতে হবে। এরপর ফ্রান্সে যে চিকিৎসক বা হাসপাতালে দেখানো হবে সেখান থেকে প্রমাণপত্র সংগ্রহ করতে হবে, যেখানে চিকিৎসার আনুমানিক খরচ এবং সময়ের উল্লেখ থাকবে। রোগী বা রোগী আত্নীয়ের সামর্থ্যোর প্রমাণপত্র এবং অগ্রীম চিকিৎসাক ব্যয় অগ্রীম প্রদান করা হয়েছে এই মর্মে প্রমাণপত্র।
শিশুদের ক্ষেত্রে: বাবা-মায়ের পাসপোর্টে শিশুরা ভ্রমণ করতে চাইলে আলাদা একটি ফরম পূরণ করে জমা দিতে হবে, সাথে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে দেয়া ছুটির অনুমতিপত্র দিতে হবে। ১৮ বছরের কম বয়সীরা অভিভাবকের সাথে বা আলাদা যেভাবেই ভ্রমণ করুক না কেন, অভিভাবকের সম্মতিপত্র প্রয়োজন হয় ভিসা নেবার জন্য।
বিদেশী নাগরিকদের জন্য: বিদেশী নাগরিকগণও ঢাকাস্থ ফ্রান্স দূতাবাস থেকে ভিসা নিতে পারেন। তাদের নিয়মকানুনও একই তবে বাংলাদেশে থাকার ভিসার মেয়াদ ভ্রমণ সময় শেষ হওয়ার পর অন্তত তিন মাস মেয়াদ থাকতে হবে।
ছাত্র বা স্টুডেন্ট ভিসাঃ
  • আবেদনের শর্ত
  • ফ্রান্সের কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে হবে এবং ভর্তির প্রমাণস্বরূপ কাগজপত্র হাতে আসতে হবে।
  • প্রয়োজনীয় তথ্য, কাগজপত্র ও ফি:
  • বৈধ পাসপোর্ট
  • দূতাবাসের ওয়েবসাইটে দীর্ঘমেয়াদী ভিসা আবেদনের ফরম পাওয়া যায় সেটি ডাউনলোড করে দুই কপি আবেদনপত্র জমা দিতে হবে। আবেদন ফরম দূতাবাস অফিসেও পাওয়া যায়।
  • দুই কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি,
  • বিমান টিকেট,
  • ভিসা আবেদন প্রক্রিয়াকরণ ফি বাবদ ৯৯ ইউরো সমপরিমাণ অর্থ জমা দিতে হয়, যা অফেরতযোগ্য।
  • জন্ম সনদ,
  • জীবনবৃত্তান্ত,
  • সকল শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদের কপি,
  • ফ্রান্সের বিশ্ববিদ্যালয় বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির চিঠি,
  • ফরাসী বিশ্ববিদ্যালয় বা বাংলাদেশের কোন বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের তরফ থেকে দেয়া স্বাস্থ্য বীমার সনদ প্রয়োজন হবে। বাংলাদেশের অনুমোদিত প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি তালিকা ওয়েবসাইটে ফ্রান্স দূতাবাসের ওয়েবসাইটে পাওয়া যাবে।
  • টিউশন ফি জমা দেয়া হয়ে থাকলে তার রশিদ,
  • ফরাসী বা ইংরেজী ভাষায় দক্ষতার প্রমাণ (যদি থাকে) হিসেবে অলিয়ঁস ফ্রঁসেজ থেকে নেয়া ফরাসী ভাষার কোর্সের সনদ, কিংবা টোফেল/আইএলটিএস সনদের কপি জমা দিতে হবে।
  • বাবা-মা বা যিনি খরচ বহন করবেন তার ব্যাংক একাউন্ট নম্বর।
  • বৃত্তি নিয়ে পড়তে যেতে চাইলে তার প্রমাণপত্র।
অন্যান্য তথ্য:
সকল কগজপত্রের মূলকপি ও ফটোকপি জমা দিতে হবে, আর সব কাগজপত্র অবশ্যই বাংলা থেকে ইংরেজীতে অনুবাদ করে দিতে হবে।
প্রক্রিয়াঃ
  • কাগজপত্রসহ পুরো ফাইলটি প্রস্তুত করতে হবে।
  • দূতাবাসের কালচারাল অ্যাটাশের সাথে ই-মেইলে (fleur.meynier@diplomatie.gouv.fr) যোগাযোগ করে এ্যাপয়েন্টমেন্ট নিতে হবে। নির্ধারিত দিনে ফাইল নিয়ে উপস্থিত হতে হবে।
  • ভিসা বিভাগের জন্য আরেকটি ঐচ্ছিক এ্যাপয়েন্টমেন্ট দেয়া হবে।
  • পর্যালোচনা শেষে ভিসা দেয়া না দেয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেয়া হবে এবং মূল কাগজপত্রগুলো ফেরত দেয়া হবে।
প্রয়োজনীয় সময়ঃ পুরো প্রক্রিয়াটিতে তিন সপ্তাহ পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। তাই যথাশীঘ্র সম্ভব আবেদন করার পরামর্শ দেয়া হয়।
প্রস্তুতিঃ ফ্রান্সে যাওয়ার আগে ফ্রান্সের ভাষা এবং সংস্কৃতি সম্পর্কে জেনে নেওয়ার পরামর্শ দেয়া হয় দূতাবাস থেকে। এজন্য অলিয়ঁস ফ্রঁসেজের ধানমন্ডি, বারিধারা বা উত্তরা শাখায় যোগাযোগ করা যেতে পারে। এখানে ফরাসী চলচ্চিত্র প্রদর্শনীসহ বিভিন্ন ধরনের প্রদর্শনী ও কনসার্ট আয়োজন করা হয়।

                               প্রবাসী বাংলাদেশী ওয়েব সাইটের আরো ও  খবর দেখতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুন
                                                                    প্রবাসী বাংলাদেশী